গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটির কারণ কী, চলুন জেনে নেই…

গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি | প্রত্যেক দম্পতিকে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে

not-pregnant

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী, পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের জীবনাচরণ। পাল্টে যাওয়া জীবনযাপন পদ্ধতি, আর এগুলো প্রভাব ফেলছে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে। পালাবদলের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও। আজকাল সাব-ফার্টিলিটি শব্দটির সাথে অনেকেই পরিচিত। এমন কী সাব-ফার্টিলিটি কোনো কোনো পরিবারে এতটাই প্রভাব ফেলছে যে অনেকে হাঁপিয়ে উঠছেন এই দাম্পত্য জীবনে। গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি বিষয়ে জানতে হবে সবার প্রথমে। এর কারণসমূহ, দৈনন্দিন জীবনধারণ পদ্ধতির সাথে প্রজনন স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আজ আমরা জেনে নিবো।

প্রথমেই জানবো সাব-ফার্টিলিটি কি?

কোনো দম্পতি যদি বাচ্চা নেওয়ার উদ্দেশ্যে ১ বছর বা এর বেশি সময় ধরে কোনো প্রকার জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করেও স্ত্রী যদি গর্ভধারণে ব্যর্থ হন, তবে এই দম্পতি সাব-ফার্টিলিটিতে ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া হয়। ইতোপূর্বে সাব-ফার্টিলিটির বদলে ইনফার্টিলিটি শব্দটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সাব-ফার্টিলিটি হিসেবে একে সংঞ্জায়িত করা হয়, কেননা যিনি এ সমস্যায় ভুগছেন তিনি হয়তো বর্তমানে কোনো কারণে প্রজননে ব্যর্থ হলেও উপর্যুক্ত চিকিৎসা পেলে সন্তান ধারণে সক্ষম হবেন।

সাব-ফার্টিলিটির প্রকারভেদ

ক) প্রাইমারি সাব-ফার্টিলিটি

যে দম্পতি বিয়ের পর থেকে কখনই জীবিত সন্তানের জন্ম দিতে পারেনি তারা প্রাইমারি সাব-ফার্টিলিটিতে ভুগছে বলে ধরা হয়।

খ) সেকেন্ডারি সাব-ফার্টিলিটি

যদি কোনো দম্পতি একটি সন্তান জন্মের পর দ্বিতীয় সন্তান কনসিভ করতে ব্যর্থ হন, তবে একে বলা হয় সেকেন্ডারি সাব-ফার্টিলিটি।

গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি নিয়ে আমরা এখন বিশদে জানবো। সন্তান ধারণে সক্ষম হতে কিছু বিষয় নিশ্চিতকরণ জরুরী। প্রত্যেক দম্পতিকে এই বিষয়ে জানতে হবে। বিশেষ করে যারা বেবি প্ল্যানিং করছেন বা বার বার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেন না, তারা আজকের লেখা থেকে উপকৃত হবেন আশা করি।

সফল ফার্টিলাইজেশন বা ভ্রূণ নিষিক্তকরণে নিচের বিষয়গুলো আবশ্যিক

১/ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফার্টিলাইজেশন সক্ষম শুক্রাণু
২/ উপর্যুক্ত আকারের সুস্থ ডিম্বাণু
৩/ নিয়মিত ডিম্বাণু নিঃসরণ প্রক্রিয়া
৪/ সঠিক সময়ে, নিয়মিত বিরতিতে সহবাস
৫/ ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী ও জরায়ুর সুস্থতা
৬/ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হরমোনাল ব্যালেন্স থাকা ইত্যাদি।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর যেকোনো একটির অনুপস্থিতিতে দেখা দিতে পারে সাব-ফার্টিলিটি।

সাব-ফার্টিলিটির জন্য স্বামী-স্ত্রী যে কেউই দায়ী হতে পারেন। আমাদের সমাজে এখনও, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও, বাচ্চা না হওয়ার জন্য একতরফা নারীকে দোষারোপ করতে দেখা যায়। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে নিশ্চিত না হয়ে এমন আচরণ করা একদমই অনুচিত। তাছাড়া যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থেকেও থাকে ধৈর্য্য নিয়ে চিকিৎসায় সাহায্য করা এবং মানসিকভাবে ভুক্তভোগীকে প্রফুল্ল রাখা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের দ্বায়িত্ব।

গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি এর কারণ

মেইল ফ্যাক্টর/পুরুষ যে কারণগুলোর জন্য দায়ী হতে পারেন-

১) শুক্রাণু সংক্রান্ত

একটি সফল ফার্টিলাইজেশনের পূর্বশর্ত হচ্ছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক আকৃতির চলৎ শক্তি সম্পন্ন শুক্রাণুর উপস্থিতি। তবেই তা পরিণত ডিম্বাণুকে নিষিক্তকরণে সক্ষম হবে।

২) হরমোনাল ভারসাম্য

পুরুষের সেক্স হরমোন হিসেবে উপস্থিত থাকে টেস্টোস্টেরন ও কিছু অ্যান্ড্রোজেন হরমোন। শরীরে টেস্টোস্টেরন ও আন্ড্রেজেন হরমোনের পরিমাণ সঠিক না থাকলে স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

৩) স্নায়ু রোগ 

যদি কোনো পুরুষ এমন স্নায়ু রোগে ভোগেন যাতে প্রজনন প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয় (যেমনঃ ইরেক্টাইস ডিসফাংশন) তবে এটিও হতে পারে সাব-ফার্টিলিটির একটি কারণ।

ফিমেইল ফ্যাক্টর বা নারীর যে কারণগুলোর জন্য দায়ী হতে পারেন-

১) গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি এর জন্য একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে বয়স

নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। একজন নারী জন্মের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণে ডিম্বাণু নিয়ে জন্মে। প্রতি রজঃচক্রের ১৪ তম দিনে একটি করে ডিম্বাণু নিসঃরিত হয়। একজন নারী তার জীবদ্দশায় গড়ে প্রায় ৪৫০ টি ডিম্বাণু নিঃসৃত করেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ ডিম্বাণুগুলোর আকার ও গুণগত মান কমে যায়। বিভিন্ন গবেষনাপত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০-৩০ বছর বয়সে একজন নারী তার সবচেয়ে সুস্থ ডিম্বাণুগুলো নিঃসৃত করেন। তাই বয়সের ব্যাপারটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

আমরা হয়তো ভাবছি ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে নেই, সন্তানের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই তাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসবো!! ভাবনাটি অবান্তর নয়, তবে সেই সাথে এই বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। শুধু তাই নয় বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, হরমোনাল ইমব্যালেন্স এই রোগগুলোর আশংকাও বেড়ে যায়, যা পরোক্ষভাবে প্রজনন স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

২) PCOS

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমের কথা শোনেনি এমন মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়া ভার! এই সিন্ড্রোমে ফিমেল ওভারিতে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিস্ট বা পানি পূর্ণ ফোসকার মতো সিস্ট তৈরি হয়। এর সাথে থাকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবাঞ্চিত লোমের পরিমান বেড়ে যাওয়া, সাথে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন বেড়ে যাওয়া তো আছেই। যার ফলশ্রুতিতে প্রতি মাসে যে একটি করে ডিম্বাণু নিঃসরনের কথা ছিলো সেটি বিলম্বিত হয়। তাই PCOS সাব-ফার্টিলিটির একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

৩) ডিম্বনালী বা ফেলোপিয়ান টিউব ব্লকেড

অনেক সময় ডিম্বনালীর পথটি অবরূদ্ধ থকতে পারে যার কারণে ডিম্বাণু নিসঃরনের পর তা জরায়ুতে যেতে পারে না। টিউবারকিউলোসিস বা কোনো টিউমার এ নালীর ভেতরের রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। কিংবা পূর্বে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি বা টিউবে বাচ্চা আসার কারণে টিউবটি ফেটে গিয়ে থাকলে সার্জিক্যাল ইন্টারভেনশনের জন্য নালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগীর পূর্বে এ ধরনের সমস্যা হয়েছিল কিনা সে ইতিহাস থেকে আমরা এসব বিষয়ে ধারনা পেতে পারি।

৪) জরায়ুর সুস্থতা

নিষেকের পর ভ্রুণ জরায়ুর দেয়ালে প্রোথিত হয়, অনেকটা বীজ রোপনের মতো করে এই প্রক্রিয়াকে বলে ইমপ্লান্টেশন। ইমপ্লান্টেশন সফলভাবে হওয়ার জন্য জরায়ুর সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জরায়ুর কমন একটি টিউমার হচ্ছে ফাইব্রয়েড। এতে জরায়ুর ভেতরে কিংবা বাইরের ওয়ালে, ছোট-বড়, এক বা একাধিক টিউমার হয়। এর কারণে নিষিক্ত ভ্রুণ জরায়ুর দেয়ালে সঠিকভাবে প্রোথিত হতে পারে না বা ইমপ্লান্টেশন হলেও এবোরশন হয়ে যায়। ফাইব্রয়েড টিউমারের উপসর্গ গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • মাত্রাতিরিক্ত ঋতুস্রাব
  • তল পেটে ব্যথা
  • অনিয়মিত ঋতুস্রাব
  • তলপেট ভারি ভারি লাগা
  • তলপেটে কোনো চাকার উপস্থিতি অনুভব করা ইত্যাদি

এছাড়াও এন্ডোমেট্রিয়োসিস, এডেনোমায়োসিস, জন্মগত ত্রুটি সহ আরও কিছু রোগ রয়েছে জরায়ুর যেগুলো গর্ভধারণে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

৫) হরমোনাল ইমব্যালেন্স

নারীদের জন্য সন্তান ধারণে হরমোনাল ব্যালেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টোরন, প্রোল্যাকটিন, লুটিনাইজিং হরমোন, ফলিকুলার স্টিমুলেটিং হরমোন এই হরমোনগুলো স্বাভাবিক মাত্রায় উপস্থিত না থাকলে গর্ভধারণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।

৬) দীর্ঘমেয়াদি রোগ

ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হাইপোথাইরয়ডিসম এই দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক নন-কমিউনিকেবল (অসংক্রামক) রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব আজকাল অতিমাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। এর জন্য অবশ্য দায়ী আমাদের অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল, খাদ্যে ভেজাল, অতিমাত্রায় প্রসেসড খাবার গ্রহণ ইত্যাদি। এই রোগগুলো একদিকে যেমন গর্ভধারণ বিলম্বিত করে তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের কারণে বেড়ে যায় গর্ভপাত ও জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ঘটনা।

৭) অটো-ইমিউন ডিজিজ

সহজ ভাষায় বলতে গেলে কখনও কখনও এমন হয় যে মানবদেহের অভ্যন্তরে এমন কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা স্বাভাবিক মানব কোষগুলোকে ফরেন পার্টিকেল হিসেবে চিহ্নিত করে ইমিউন মেকানিজমের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়। এই অ্যান্টিবডিগুলো কোন বহিরাগত স্টিমুলাস ছাড়া আপনা-আপনি দেহভ্যন্তরে তৈরি হয়ে নিজের শরীরের কোষকেই ধ্বংস করে দেয় বলে এই ধরনের রোগগুলোকে বলা হয় অটো ইমিউন ডিজিজ, যেমনঃ অ্যান্টি ফসফোলিপিড অ্যান্টিবডি সিন্ড্রোম, সিস্টেমিক লুপাস এরাইথ্রোমেটোসাস ইত্যাদি। এই সিন্ড্রোমে ভোগা রোগীদের বার বার মিসক্যারেজ বা এবোরশন হতে পারে।

৮) সারভাইকাল ইনকম্পিটেন্স

এমন হয়তো অনেকেই শুনেছেন যে একজন মা কনসিভ করছেন ঠিকই কিন্তু প্রথম তিন মাস কিংবা দ্বিতীয় তিন মাসে এসে রিপিটেড এবোরশন হয়ে যাচ্ছে! এর একটি কারণ হতে পারে জরায়ু মুখ বা সারভিক্স এর ইনকম্পিটেন্স। এর অবশ্য চিকিৎসা আছে, সমস্যাটি বুঝতে পারলে একজন গাইনকোলজিস্টের তত্বাবধানে থেকে, খুব যত্ন ও সাবধানতার সাথে গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসার মাধ্যমে একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম নিশ্চিত করা যায়।

কীভাবে বুঝবেন আপনি সাব-ফার্টিলিটিতে ভুগছেন?

আগেই বলেছি এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বাইরে থেকে বাচ্চা নেওয়ার ট্রাই করার পরও যদি কোনো দম্পতি ব্যর্থ হন, তবে ধরে নেওয়া হয় এই দম্পতি সাব-ফার্টিলিটিতে ভুগছেন। তাদের এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। এছাড়া মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ঋতুস্রাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, মাসিকের সময় অসহনীয় ব্যথা, সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা এই সমস্যাগুলো অনেক সময় সাব-ফার্টিলিটির কারণকে ইঙ্গিত করে। তাই এই উপসর্গগুলোকে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি কি প্রতিরোধ করা সম্ভব? 

এই পৃথিবীতে সকল জীবের সৃষ্টির রহস্য কেবল প্রকৃতিই সম্পূর্ণ ব্যখ্যা করতে পারে। মানুষ তার কিছু কিছু অজানাকে উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে কেবল মাত্র। সাব-ফার্টিলিটি নিয়ে এতো এতো গবেষণা থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে যেগুলো আমরা পরিহার করতে পারি, কিছু কারণ সঠিক চিকিৎসায় নিরাময় যোগ্য, কিছু কারণ ও তার চিকিৎসা এখনও অজানা। যে সব কারণগুলো আমরা চাইলে কিছু মাত্রায় পরিহার করতে পারি নিচে সেগুলো সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো-

১/ সঠিক সময়ে ফ্যামিলি কমপ্লিট করা

একজন নারী যখন প্রথমবারের মতো মা হতে যান তখন তাদেরকে বলা হয় প্রাইমি গ্রাভিডা বা প্রথম বার গর্ভবতী, এই প্রাইমি গ্রাভিডার বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৮ বছরের কমে মা হতে গেলে যেমন মা ও বাচ্চার অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে ( সল্প ওজনের বাচ্চা জন্মদান, প্রিম্যাচিউর বার্থ, নিওনেটাল জন্ডিস, সেপসিস ইত্যাদি), তেমনি ৩০ বছরের বেশি বয়সে প্রথমবার মা হতে গেলেও গর্ভকালীন ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন, খিচুনি, ম্যালপ্রেজেন্টেশন (পেটের ভেতর বাচ্চার অবস্থান সঠিক না থাকা), জেনেটিক ডিসঅর্ডার, রিপিটেড অ্যাবোরশন বা ইন্টা-ইউটেরাইন ফিটাল ডেথ এর হার অনেক বেশি বেড়ে যায়।

বয়সের সাথে সাথে মহিলাদের পেলভিসের স্থিতিস্থাপকতাও কমে যায় ফলে ম্যালপজিশন, অবস্ট্রাক্টেড লেবার ও সিজারিয়ান সেকশনের সংখ্যা ও সমানুপাতিক হারে বাড়ে। তাই, ৩০ বছর বয়সের আগেই প্রথম বাচ্চাটি নেয়ার চেষ্টা করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ মতো সঠিক সময়ের বিরতিতে পরবর্তী বাচ্চা নিয়ে ফ্যামিলি কমপ্লিট করে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ।

২/ লাইফস্টাইল মডিফিকেশন

আজকের জীবনাচরণ নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে আপনার আগামী জীবনে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে খুব ছোট বয়স থেকেই। যার যেটুকু সময় চলে গিয়েছে সেটা নিয়ে না ভেবে বরং আজ থেকেই খাদ্য তালিকায় তাজা শাক-সবজি আর ফলমূল যোগ করুন, নিয়মিত হাঁটা ও ধীরে ধীরে ব্যায়াম এর অভ্যাস করুন। বাইরের জাংক ফুড ও অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে করে বাড়তি ওজন, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন প্রভৃতি দীর্ঘমেয়াদি রোগের সম্ভাবনা অনেকগুন কমিয়ে আনা যায়। যারা পলি-সিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ভুগছেন তাদের জন্য হেলদি লাইফস্টাইল অনুসরণ আরও বেশি জরুরী, কেননা এই রোগে এমনিতেই হরমোনাল কারণে ওজন বেড়ে।

৩/ প্রফুল্ল থাকা

মানসিক প্রশান্তি আামাদের হাজার ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাই সন্তান গ্রহণ বিষয়ক জটিলতা দেখা দিলে মনে মনে দুশ্চিন্তা না করে দাম্পত্য সঙ্গীর সাথে খোলামনে আলোচনা করুন। নিজের সমস্যার কথা তাকে জানান এবং তার কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনুন। দু’জন দু’জনকে সময় ও মানসিক সাপোর্ট দিন। খুব একঘেয়ে লাগলে চট করে হাওয়া বদল করে আসতে পারেন।

অবশ্যই একজন ডাক্তারের তত্বাবধানে থাকুন। গর্ভধারণে ব্যর্থতা ও সাব-ফার্টিলিটি কারণ খুঁজে বের করতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরিক্ষাগুলো করে ফেলুন, এতে চিকিৎসার পথ সহজ হবে। আমাদের দেশে অনেক পরিবারেই বন্ধ্যাত্বের দায় একতরফা স্ত্রীর ঘাড়ে চাপানো হয় পুরুষসঙ্গীর কোন ইনভেস্টিগেশন না করেই, এটি অনুচিত। এতে করে একদিকে পারিবারিক কলহ বাড়ে, অন্যদিকে সঠিক ডায়াগনোসিস আড়ালে থেকে যাওয়ায় সঠিক চিকিৎসাও অসম্ভব হয়ে যায়। তাই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে আপনার সঙ্গীকে সাহায্য করুন। আজ এ পর্যন্তই, আগামীদিন কথা বলবো অন্য কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা নিয়ে, সে পর্যন্ত সবাই সু্স্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *